ঢাকা,সোমবার, ৬ মে ২০২৪

ঈদগাঁওতে বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতচিত্র ভেসে উঠছে: সংস্কার দাবী‎

P-1এম আবু হেনা সাগর,  ঈদগাঁও :::

গেল কয়েকদিন পূর্বে জেলার অন্যান্য স্থানের ন্যায় বৃহত্তর ঈদগাঁওতে প্রবল বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলের বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছিলো ঈদগাঁও বাজার সহ বিশাল এলাকার নিমাঞ্চল। সর্বশ্রেণি পেশার মানুষের দূর্ভোগ আর দূর্গতি চরম পর্যায়ে পৌছেছিলো। বন্যা পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা ছয় ইউনিয়নের প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের সড়ক-উপসড়ক সহ মহা সড়ক জুড়েই ক্ষতচিত্র ভেসে উঠছে। তবে দুয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জেলা সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা ছয় ইউনিয়নের নিমাঞ্চল কিংবা গ্রামাঞ্চল থেকে পাঁচদিন পর বন্যার পানি নিচে নেমে গেছে। তবে বেড়েছে দূর্ভোগ। অন্যদিকে বৃহত্তর এলাকায় বন্যা পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ সড়ক সহ কালভাট, ছোট ব্রীজ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতচিত্র ভাসছে। এদিকে এসব সড়ক দ্রুত সময়ে সংস্কার করে জন ও যানচলাচল নিশ্চিত করার আহবান জানান এলাকাবাসী। বন্যায় লন্ডভন্ড হওয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঈদগাঁও ইউনিয়নের বৃহৎ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকা দরগাহ পাড়ার প্রধান যাতায়াত সড়ক ও ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তর মাইজ পাড়ার নাসি খালের কাঠের ব্রীজটি গেল বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জন ও যানচলাচল বন্ধ। গেলো বন্যার ঢলের পানিতে বিশাল এলাকার লোকজন হাবু-ডুবু খেয়েছিলো। গ্রামীণ যোগাযোগ সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি চলাচল অনিচ্ছিত হয়ে পড়ে। এতে করে নিদারুন কষ্টে ছিলো বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন। পানিবন্দি এলাকার লোকজন চুলাই আগুন জ্বালাতে পারেনি কয়েক দিন। অনেকে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। আবার বহুজন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনও কাটাচ্ছে। বাড়ির গুছালো জিনিসপত্র বন্যার পানি তছনচ করে দিয়েছে। এদিকে বেশ কিছুদিন পূর্বে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত আর ঢলের পানি নিমাঞ্চলের এলাকা থেকে নেমে যাওয়ায় স্ব স্ব এলাকায় ক্ষতচিত্র পুনরায় ভেসে উঠছে। তবে সাধারণ লোকজনের চলাফেরায় দূর্ভোগ আর দূর্গতি বেড়েছে। ঈদগাঁওর পালপাড়া, ভোমরিয়াঘোনা, মাইজপাড়া, চান্দেরঘোনা, কালিরছড়া, মাছুয়াখালী, জাগিরপাড়া, সাতঘড়িয়া পাড়া, মেহেরঘোনা সহ বিভিন্ন গ্রামঞ্চল থেকে ঢলের পানি কমানোর পরপরই গ্রামীণ সড়ক জুড়েই কর্দমাক্ত আর বড় বড় গর্ত সহ ক্ষতচিত্র ভাসছে। পাশাপাশি বৃহত্তর মাইজ পাড়া হয়ে ঈদগাঁও বাজার, বাসষ্টেশন সহ বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগের আরেক অন্যতম মাধ্যম ঐতিহ্যময় নাসি খালের উপর নির্মিত কাঠের সাঁকোটি গেল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এই নিয়ে বৃহত্তর এলাকাবাসী চলাচলের ক্ষেত্রে নিদারুন কষ্ট পাচ্ছে। যে ব্রীজ দিয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবি, কর্মজীবি ও শত শত পথচারী অনায়াসে যাতায়াত করত। কিন্তু সম্প্রতি সাঁকোটি ভেঙ্গে যাওয়ায় দুরর্বতি স্থান হয়ে দ্বিগুন টাকা খরচ করে প্রয়োজনীয় কাজকর্মে যেতে হয় জানান ছৈয়দ করিম সহ আরও অনেকে। অপরদিকে একই ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ দরগাহ পাড়ার আরেক প্রধান যাতায়াত সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়ায় পনের সহ¯্রাধিক মানুষজন চরমভাবে ভোগান্তিতে পড়েছে যাতায়াত নিয়ে। কোন রকম কষ্ট করে হেঁটে পার হলেও যানবাহন চলাচল করতে না পারায় রোগী সহ নারীরা মহা বিপাকে পড়েছে বলে জানান সেলিম নামের এক ছাত্রনেতা। এই যোগাযোগ সড়ক দিয়ে পূর্ব ভাদিতলা, দক্ষিণ ভাদিতলা, শিয়াপাড়া, হাসিনা পাহাড়, স্থানীয় দরগাহ পাড়াবাসী সহ বিকল্প সড়ক হিসাবে বহুদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে ভোমরিয়াঘোনা আর রামু উপজেলার ঈদগড় আর নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীর লোকজন। গেল বন্যায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে এ সড়কটি। আবার বৃহত্তর এলাকায় জালালাবাদ ইউনিয়নে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রাবারড্যাম পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন আর ঈদগাঁও ফরাজী পাড়ার প্রধান যোগাযোগ সড়কের লরাবাক এলাকায় রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ঐ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ। বাঁশের সাঁকো তৈরী করে কোন রকম চলাফেরা করছে শিক্ষার্থী সহ ঈদগাঁও ফরাজী পাড়া সড়কের মানুষজন। বন্যার পানি ইউনিয়নের জলদাস পাড়া, তেলিপাড়া, বাজারপাড়া, লরাবাক, পালাকাটা, বটতলী পাড়া, মোহনভিলা সহ নানা গ্রামাঞ্চল থেকে পানি নি¤œস্থরে চলে গেছে। ঐ সব এলাকার মানুষজন ব্যাপক কষ্টে দিনপার করছে। রাখে আল্লাহ মারে কে অবস্থায় রয়েছে বন্যা কবলিত এলাকার অসহায় লোকজন। ঠিক একই ভাবে পোকখালী, চৌফলদন্ডী, ইসলামপুর সহ রামুর ঈদগড় এলাকায় গেল বন্যার পানিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে পড়েছিলো। বর্তমান সময়ে গ্রামগঞ্জ থেকে ঢলের পানি কমে যাওয়ায় কর্দমাক্ত সহ নানা কারনে দূর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার সর্বশ্রেণি পেশার মানুষজন। এদিকে ৮ জুলাই বিকেলে ঈদগাঁও বাজারের শাপলা চত্বরে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জালালাবাদ – পোকখালী সহ বৃহত্তর এলাকার বন্যা কবলিত জনগণের দূর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক কর্মী কুতুব উদ্দিন চৌধূরীর এক ব্যতিক্রমধর্মী পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় দ্রুত সময়ে বন্যা কবলিত লোকজনের পাশে অবস্থান সহ ক্ষত বিক্ষত হওয়া রাস্তাঘাট অবিলম্বে সংস্কারের জোর দাবী জানান সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট। অপরদিকে জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাঁও বাজারের বিকল্প সড়ক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আলমাছিয়া সড়কটি। কিন্তু এ সড়কটি মাদ্রাসা গেইটের সামনে থেকে সড়কের যত্রতত্র স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যাতে করে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবি সহ সাধারণ লোকজন ও ছোট বড় যানবাহন চলাচল। রাত্রিকালীন সময়ে উক্ত সড়কের যানবাহন চলাচল করলে যে কোন মুহুর্তে দূর্ঘটনার আশংকা প্রকাশ করেন সচেতন মহল। তারা অতিসত্ত্বর মাদ্রাসার শিক্ষার্থী চলাচলের এ সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবী জানান। মুষলধারে বৃষ্টি আর ব্যাপক কাদাজলে সয়লাব হয়ে পড়ে পুরো সড়কটি। এমনকি গর্তে পানি জমে গিয়ে যানবাহন চলাচলে নিধারুন কষ্ট পাচ্ছে। আবার ঈদগাঁও আলমাছিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা, ঈদগাঁও ফরিদ আহমদ (ডিগ্রী) কলেজ, ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ঈদগাহ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন ও অরবিট স্কুল এন্ড কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থী কোন না কোন ভাবে এ সড়ক দিয়ে যাতাযাত করে থাকে। প্রায়শ সড়ক জুড়ে কর্দমাক্তের কারণে শিক্ষার্থীদের চলাচলে অনেকটা অনিহা বলে জানা যায়। তাদের দিকে দৃষ্টি রেখে গুরুত্ববহ সড়কটি সংস্কার করলে জন ও যানবাহন চলাচলে অনেকটা সুবিধা পাবে। কয়েক পথচারীর মতে, এ সড়কটি দীর্ঘ সময় ধরে অযতেœ অবহেলায় পড়েছিল। দেখার কেউ না থাকায় বর্তমান যাতায়াত রাস্তাটির এহেন অবস্থা বললেই চলে।

——————————————————–

ঈদগাঁওতে বন্যায় ‘কাল’ হলো ব্যবসা বানিজ্যে ঃ বিপাকে ব্যবসায়ীরা

এম আবু হেনা সাগর, ঈদগাঁও ::

দক্ষিণ চট্টলার বৃহৎ বানিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁওতে ব্যবসা বানিজ্যে কাল হলো গেল বন্যায়। এতে করে লক্ষ লক্ষ টাকায় পুজি খাটানো ব্যবসায়ীরা চরম ভাবে বিপাকে পড়েছে। জানা যায়, রমজান শেষে ঈদ পরবর্তী সময়ে দু’দফা বন্যার কবলে পড়েছে ঈদগাঁও বাজার সহ বৃহত্তর এলাকা। এই নিয়ে প্রায় সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি আর দূর্ভোগ- দূর্গতিতে পড়েছে এখানকার লোকজন। আর মাসাধিক পার হলেই ব্যবসায়ীক আরেক মৌসুম আসছে ঈদুল আযহা। এই মৌসুমকে ঘিরে সম্প্রতি ঈদগাঁও বাজারের স্ব স্ব ব্যবসায়ীরা ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে লাখ লাখ টাকার পুজি খাটিয়ে মালামাল ক্রয় করে আনলেও মহাবিপাকে পড়েছে এসব ব্যবসায়ীরা। যার ফলে গেল বন্যায় কাল হয়ে দাড়ালো ব্যবসা বানিজ্যে। বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা সাত ইউনিয়ন- ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, চৌফলদন্ডী, পোকখালী, জালালাবাদ, ভারুয়াখালী সহ ঈদগাঁওর প্রত্যান্ত গ্রামগঞ্জ ছাড়াও রামুর রশিদ নগর, ঈদগড়, নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ও চকরিয়ার খুটাখালী এলাকার রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত করে দিলো গেল বন্যা। এখনো বিভিন্ন জায়গায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে বন্যায় কবলিত অসহায় মানুষ। পাশাপাশি কর্দমাক্ত আর খানাখন্দকের ফলে চলাচলে নিদারুন কষ্ট পাচ্ছে সাধারণ লোকজন। অনেকে সপ্তাহ ধরে বাজারমূখী হতে পারছে না। এদিকে ঈদগাঁও বাজারের নিউ মার্কেট, রহমানিয়া মার্কেট, মাতবর মার্কেট, শফি সুপার মার্কেট, তাজ শপিং কমপ্লেক্স, বেদার মার্কেট, বঙ্গ মার্কেট, কবিরাজ সিটি সেন্টার, গফুর সিটি সেন্টার সহ ষ্টেশন মার্কেটে কসমেটিক্স ও কাপড়ের দোকানপাঠ এখনো বন্ধ রেখেছে অনেক ব্যবসায়ীরা। কারণ দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতাসাধারণ আসতে না পারায় এহেন অবস্থার সৃষ্টি বলে জানান ব্যবসায়ী। কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও সেখানেও তেমন বেচাবিক্রি নেই।

পাঠকের মতামত: